০৫ নভেম্বর, ২০১৮ ১৩:৩২:২৭
বেরোবি প্রতিনিধি:
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রতিষ্ঠার দশ বছর অতিক্রম হলেও এখনো স্থাপিত হয়নি স্থায়ী শাখা ব্যাংক। ফলে প্রতিনিয়ত সেমিস্টার ফিসহ বিভিন্ন ফি প্রদানের সময় নানা ভোগান্তির শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রবিবার বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, লোক-প্রশাসন, বাংলা, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের প্রায় ১০টি ব্যাচের সেমিস্টার ফি ও ফরম পূরণের টাকা জমা দেয়ার শেষ সময় ছিলো। একটি ছোট রুমে অস্থায়ী ব্যাংক বুথে প্রায় ৫শ’ শিক্ষার্থী তাদের বিভিন্ন ফি জমা দিতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হন এ দিন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ফরম পূরণ করে জমা দেয়ার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
ফরম পূরণ করে জমা দিতে আসা একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী বাপ্পি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী ব্যাংক শাখা না থাকায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে টাকা জমা দিতে হয়। এতে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। অতি শীঘ্রই বিশ^বিদ্যালয়ে একটি স্থায়ী শাখা ব্যাংক স্থাপন করা জরুরী।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিকেম আলী ও আবিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজকে আমাদের বিভাগসহ ৫ থেকে ৬ টি বিভাগের প্রায় ৫শ’ শিক্ষার্থীর ভর্তি এবং ফরম পূরণের টাকা জমা দিচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে। আমাদের আজকেই ফরম পূরণের টাকা জমার দেয়ার শেষ তারিখ। সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি এখন বাজে সাড়ে ১২ টা। এখন পযর্ন্ত টাকা জমা দিতে পারিনি। বিশেষ করে ভিড়ের মধ্যে মেয়ে শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘবে একটি স্থায়ী ব্যাংক শাখা জরুরী।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব আখলাক বলেন, প্রায় ২ ঘন্টা ধরে ফরম পূরণের টাকা জমা দেয়ার জন্য দাঁিড়য়ে আছি । বিশ^বিদ্যালয়ের কোনো স্থায়ী ব্যাংক বুথ নেই, তার ওপর বিভাগগুলো হঠাৎ করে একসাথে ভর্তি ও ফরম পূরণের তারিখ নির্ধারণ করে। একদিনে একাধিক বিভাগের ভর্তি ফরম পূরণের তারিখ নির্ধারণ করায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির সীমা ছাড়িয়ে যায়। ছোট একটা রুমে টাকা জমা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। যদি বিশ^বিদ্যালয়ে একটি স্থায়ী ব্যাংক শাখা থাকতো তাহলে হয়তো এতো ভোগান্তি পোহাতো হতো না শিক্ষার্থীদের।
মুখতার ইলাহী হলের শিক্ষার্থী মাহবুল মন্ডল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ক্লাস না করে হল ফি জমা দিতে এসেও জমা দিতে পারলাম না অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুরের লালবাগস্থ জনতা ব্যাংকের একটি অস্থায়ী ব্যাংক বুথের মাধ্যমে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি, হল ফি প্রদানসহ সকল অর্থ প্রদানের কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ দপ্তরের একটি অস্থায়ী কক্ষে দীর্ঘদিন ধরে চলছে শিক্ষার্থীদের এ অর্থ গ্রহণের কাজ। সপ্তাহে পাঁচদিন বেলা ১১ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত চলে অর্থ জমা কার্যক্রম। সকল প্রকার অর্থ গ্রহণে দুইজন কর্মকর্তা যেমন হিমশিম খাচ্ছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের সময় অপচয় হচ্ছে দ্বিগুণ। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা সৃষ্টি হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাংকের স্থায়ী শাখা স্থাপনে নজর দেয়নি বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই অস্থায়ী ব্যাংক বুথেই শিক্ষার্থীদের একই সাথে হল ভর্তি, একাডেমিক সেশনের ভর্তি, ফরম পূরণের অর্থ, মেডিকেল ও লাইব্রেরি কার্ডের জন্য অর্থ, অনার্স ও মাস্টার্স এর সার্টিফিকেট উত্তোলনে অর্থ প্রদানসহ যাবতীয় অর্থ জমা দিতে হয়। একটি ভাড়া করা কক্ষে এতগুলো কাজ সংক্ষিপ্ত সময়ে মাত্র দুইজন কর্মকর্তাকে সামলাতে হয়। যার ফলে টাকা জমা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে থাকছে ঘন্টার পর ঘন্টা। দিনদিন ভোগান্তির মাত্রা বেড়েই চলছে শিক্ষার্থীদের ।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয়টি অবগত থাকলেও কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর যে তিনটি মেয়াদে (২০০৯-২০১২, ২০১০-২০১৫ এবং ২০১৫-২০১৮) কাজের পরিকল্পনা করা হয় সেখানেও ব্যাংক স্থাপনের কোনো পরিকল্পনা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জনতা ব্যাংক লালবাগ শাখার অফিসার মো. হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই আমরা এই প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমরা শুধু অর্থ জমা রাখি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা ব্যাংক স্থাপনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে মৌখিক আলোচনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইব্রাহিম কবির বলেন, আমি ঢাকায় আছি। এ বিষয়টি আমি জানি না।
এই সমস্যা সমাধানের স্থায়ী পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য একটি আলাদা ব্যাংক বুথ স্থাপনের পরিকল্পনা আছে আমাদের। তবে কবে নাগাদ স্থাপন করা হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেননি তিনি।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) কুড়িগ্রাম জেলার শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি’র নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে ভূগোল ওপরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিরুল ইসলাম মুরাদকে সভাপতি ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী এস.এম. বদরুদৌজা চৌধুরী সিফাতকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীতকরা হয়েছে। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতি। এছাড়া সহ-সভাপতি হিসেবে হাসান হাফিজ রাজু ও আখেরুজ্জামান তুষার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে শফিকুল ইসলাম সবুজ ও রাসেল রানা এবং সাংগঠনিক সম্পাদকপদে মনিরুজ্জামান মাসুম ও আরিফ হোসেনকে মনোনীত করা হয়েছে।