নরেন্দ্র মোদি যা করেছেন, তা বাধ্যবাধকতায়। তার শপথ অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে দিল্লির আমন্ত্রণ না জানানোর সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে এ কথাই বলল ইসলামাবাদ।
পাক ইংরেজি দৈনিক ‘ডন’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেছেন, “তার (প্রধানমন্ত্রী মোদি) ভোটের প্রচারের ফোকাসটাই ছিল পাকিস্তানকে শূলে চড়ানো। পাকিস্তানের সমালোচনা করা। সেই পথ থেকে উনি এত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসবেন, এটা আশা করাটাই হবে অবিবেচকের কাজ।”
পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা-সহ কয়েকটি প্রতিবেশী দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের ডাকা সত্ত্বেও পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে যে আমন্ত্রণ জানায়নি দিল্লি, তাকে খুব একটা বড় করে দেখতে চাইছে না ইসলামাবাদ। কুরেশির কথায়, “সেটাই তো আমাদের প্রত্যাশিত ছিল!”
কুরেশি এও বলেছেন, এর পরেও তাদের লক্ষ্য বদলায়নি। সেটা হল, দিল্লির সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলি মিটিয়ে ফেলা। মিটিয়ে ফেলার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
আগামী বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী মোদির শপথ অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য ডাক পেয়েছেন বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, নেপাল ও ভূটানের রাষ্ট্রপ্রধানরা। ভারতে আসার অনুরোধ জানিয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে কিরঘিজস্তান ও মরিশাসের রাষ্ট্রপ্রধানকেও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। বিদেশমন্ত্রক সোমবার রাতে এই খবর দিয়ে বলেছে, “যা হয়েছে, তা সরকারের (কেন্দ্র) ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই।”
যদিও এ বার প্রথম দফার ভোটের আগের দিন, ১০ এপ্রিল পাক প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, আলোচনার টেবিলে বসে সমস্যা মেটানোর জন্য মোদির নেতৃত্বে এনডিএ সরকার ক্ষমতায় এলেই ভালো হয়। ভোটের ফল বেরনোর দিনই টুইট করে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে অভিনন্দন জানান ইমরান। তার দু’দিন পর, গত শনিবার মুলতানে ইফতারের নৈশভোজে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি জানান, দিল্লির সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য তৈরি হয়েই রয়েছে ইসলামাবাদ। পরের দিন তদারকি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে টেলিফোন করে অভিনন্দন জানান পাক প্রধানমন্ত্রী।
এত কিছুর পরেও প্রধানমন্ত্রী মোদির শপথ অনুষ্ঠানে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি ইমরানকে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাক প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে ভাবী এনডিএ সরকার ইসলামাবাদকে এড়িয়ে চলারই ইঙ্গিত দিতে চাইছে। তাদের মতে, পাক প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ না জানানোর মাধ্যমে ভাবী সরকার বার্তা দিল, ২০১৪ থেকে ২০১৯, এই পাঁচ বছরে খাতায়-কলমে প্রতিবেশীদের নিয়ে তার পছন্দ-অপছন্দ বদলে গিয়েছে। কারণ, পাঁচ বছরে আগে মোদি যখন প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী হলেন, তখন তার শপথ অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য ‘সার্ক’ জোটের দেশগুলির রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আর পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে। এসেওছিলেন শরিফ। এ বার ‘সার্ক’ জোটের নেতাদের না ডেকে আমন্ত্রণ জানানো হলো ‘বিমস্টেক’ জোটের রাষ্ট্রপ্রধানদের।
কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, কিরঘিজস্তানের প্রেসিডেন্ট ও মরিশাসের প্রধানমন্ত্রীকে? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা, “কিরঘিজ প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট এখন সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের প্রধান। আর মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী এবার প্রবাসী ভারতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রধান অতিথি।”
অন্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানোর আগে সংশ্লিষ্ট দেশগুলির রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিফ অফ প্রোটোকল নাগেশ সিংহ। তার ভিত্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফে জানানো হয়েছে শপথ অনুষ্ঠানে আসছেন বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও কিরঘিজস্তানের প্রেসিডেন্টরা। তবে মিয়ানমার থেকে শেষ পর্যন্ত কে আসবেন আউং সান সু চি নাকি প্রেসিডেন্ট উইন মাইয়িন্ট তা এখনও সুনিশ্চিত হয়নি।